স্বপ্ন

(লেখিকার অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)
___________________

অনেক ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম। সারাজীবন চাকরি করে যাব কখনও ভুল করেও ভাবিনি। তাই সুযোগ পেলেই নিজের কিছু শুরু করে দিতাম। টাকা ছিল না, তাই বড় আকারে কখনও কিছু করতে পারিনি। কখনও ট্র্যাভেল গ্রুপ তৈরি করেছি তো কখনও ট্র্যাভেল বা নিউজ ওয়েব সাইট। কিন্তু ওই যে বললাম ট্যাঁকের জোর ছিল না। তাই সব থেমে গিয়েছে মাঝপথেই। তার উপর বেঁচে থাকার জন্য চাকরি করতে গিয়ে আরও সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে যতবার একটা করে স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছে ততবার নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখেছি।

২০১৩-র মার্চে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল “সকালবেলা” নিউজ পেপার। বাবা অনেকদিন আগেই গত হয়েছিলেন। মা-র পেনশনে কতটাই বা চলে। বাংলা সংবাদ মাধ্যম তখন বড় ধাক্কা খেয়েছে সারদা গ্রুপের ধরাশায়ী হয়ে যাওয়ায়। বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই সংস্থার তিনটে নিউজ পেপার, চ্যানেলসহ একগুচ্ছ সংবাদ মাধ্যম। বাংলা বাজারে নেই কোনও চাকরি। যেখানেই যাচ্ছি ঘাড়ধাক্কা খাচ্ছি।

তখনই এক সতীর্থর সঙ্গে পরিকল্পনা করি ওয়েবসাইটের। বাংলাদেশ থেকে এক বন্ধু সাইটটি বিনে পয়সায় বানিয়ে দেন। আমরা দু’জন কাজ শুরু করি। সঙ্গী আমার একটা ল্যাপটপ আর একটা ডেটাকার্ডে। আমাদের সঙ্গে বিনে পয়সায় সেই সময় যোগ দেন “সকালবেলা” থেকে চাকরি যাওয়া বেশ কয়েকজন। কাজ চলতে থাকে। আমাদের উদ্যোগ দেখে সেই সময় একটি সংস্থা আমাদের পাশে দাঁড়ায় এবং স্পনসর করে। সেটা ছিল www.kolkata24x7.com যা আজও চলছে। তবে আমি বা আমার শুরুর সতীর্থ আর সেখানে নেই।

দ্বিতীয় কাজটি শুরু করি একাই। আমি ক্রীড়া সাংবাদিকতা করার জন্য সেই দিকটাতেই আমার বেশি ঝোঁক ছিল। তাই শুরু করি www.kehlupdates.com । একাই চালাই দীর্ঘদিন ঘরে বসে আবার কখনও মাঠে-ঘাটে ঘুরে। কিন্তু চলছিল না। এভাবে এক বছর চালানোর পর হঠাৎই সাইটটা উধাও হয়ে গেল। ব্যাঙ্কের ভল্টে জমা রাখা টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার মতোই দুঃস্বপ্ন। বড় ধাক্কা খেল তিল তিল করে গড়ে তোলা একটা আকাঙ্ক্ষা। নিরুপায় হয়ে কী করব ভাবছি, তখন একটা চাকরির সুযোগ এল। নিয়ে নিলাম। বাঁচতে তো হবে। তখন আর একার উদ্যোগে কিছু করার ক্ষমতা ছিল না।

সেই চাকরি তিন বছর করার পর ভাবলাম এবার আবার শুরু করি। স্বপ্নটা তো মাথার মধ্যে কিলবিল করছিল এতগুলো বছর ধরে। শুরু করলাম www.justduniya.com । পিছন থেকে কয়েকজন বন্ধু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। অনেক বন্ধু লেখা দিয়ে আজও সাহায্য করেন। যাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতার কোনও শেষ নেই। কিন্তু ওই বিধি বাম। টাকা নেই তো। প্রতিদিনের জীবনে চলতে হবে তো। তাই আবার চাকরি।

সেই চাকরিতে প্রতিদিন তিন-চার হাজার শব্দ লেখার পর দিনের শেষে লেখার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। কোনও রকমে বন্ধুদের সাহায্যে সাইটটিকে আপডেট রাখার চেষ্টা করি। করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে এখন সেই চাকরিও আর নেই। সাইটের জন্য কোনও স্পনসরও নেই। নতুন চাকরির হদিশও নেই।

শুধু সঙ্গে আছে স্বপ্নটা আর একটু আশ্বাস পেলে লড়ে দেওয়ার অদম্য জেদটা।
___
সুচরিতা সেন চৌধুরী
২৬শে আগস্ট, ২০২০