— পর্ব ১ —
_______________________

অবশ্য আমার কথাগুলো বলছি যারা উত্তর দিতে চায়, তাদের কাছে। যারা কিছু পড়বেনা, ভাববেনা, আর খুন জখম হ্যাকিং ট্রোলিং রক্ত চাই এসব রাস্তায় যাবে, তাদের কাছে নয়।

আমি মনে করিনা, আর এস এস অথবা বিজেপি মানেই “রক্ত চাই”এর দল। আমি তাদের সেন্টিমেন্ট বুঝি। অন্ততঃ, দেশপ্রেম যে তাদেরও আছে, তা বুঝি। আশা করবো তারাও বুঝবে আমিও একজন দেশপ্রেমিক। এবং আমার মতো অনেকেই যারা পুলওয়ামা নিয়ে যুদ্ধ ও রক্ত চাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারাও দেশপ্রেমিক।

কেউ দেশদ্রোহী নই আমরা। দেশের প্রতি, দেশের মানুষদের প্রতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা আছে। আমি নিজেকে একজন হিন্দু বলেই মনে করি। আমি ধর্ম ও অধ্যাত্ম মানি। কিন্তু ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা, ঘৃণা ও গোঁড়া রক্ষণশীলতার বিরোধী। দেশ ছেড়ে এসে অন্য দেশে থাকলেই বিদেশী হয়ে যায়না। সংঘ পরিবারের হাজার হাজার সদস্য ও সমর্থক আমেরিকা ও ইউরোপে থাকে। তারা কি সবাই বিদেশী?

আমি ইসলামিক সন্ত্রাসকে সন্ত্রাস বলি। সভ্যতার শত্রু বলে চিহ্নিত করি। আমি কম্যুনিজমকে সমর্থন করিনা। আমি কংগ্রেসি রাজনীতিকে চিরকাল ঘৃণা করে এসেছি। অথচ, কংগ্রেসের মধ্যেও আমার বহু কাছের মানুষ ছিল ও আছে। সেরকম বামপন্থী দলগুলোর মধ্যেও আমার খুব কাছের মানুষদের আমি দেখেছি সারাজীবন। তাদের ত্যাগ ও দেশপ্রেমকে আমি শ্রদ্ধা করে এসেছি সারাজীবন।

আমার অনেক বিজেপি ও আর এস এস বন্ধু আছে। তাদের অনেককে আমি চল্লিশ বছর, এমনকি পঞ্চাশ বছর ধরে চিনি। আমি যখন ছ বছর বয়েসের শিশু, তখন ওই শিশু স্বয়মসেবক হিসেবে আর এস এসে ঢুকেছিলাম স্বর্গীয় পিতৃদেব শ্রী জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। জিতেন্দ্রনাথ ছিলেন সংঘ প্রচারক, এবং অটলবিহারী, আদভানির আজীবন বন্ধু। হিন্দুত্ববাদী নাথুরাম গডসে সাভারকার ইত্যাদি নেতাদের সাহায্যে গান্ধীহত্যা করার পরে যখন আর এস এস নিষিদ্ধ হয়, তখন আমার বাবা তিন বছরের মতো জেলে ছিলেন।

এই জেলে থাকার কারণে বাবা কখনো সরকারি চাকরি পাননি, এবং আমাদের সারাজীবন দারিদ্র্যের মধ্যে কাটাতে হয়েছে। আমার মা নিজে না খেয়ে তার খাবারটা আমাদের অনেক সময়ে দিয়ে দিতো। এবং, খুব কম বয়েসে ক্যানসারে মারা যায়। যাক, সেসব অন্য কথা। অন্য প্রসঙ্গ।

আমাদের বাড়িতে আর এস এসের বিরাট বিরাট সর্বভারতীয় নেতারা আসতেন।ভাউরাও দেওরাস, নানাজী দেশমুখ, একনাথ রাণাডে — এমনকি গুরু গোলওয়ালকার — আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, এবং স্নেহ করতেন।

আমি ছ বছর বয়েস থেকে বাইশ বছর বয়েস পর্যন্ত আর এস এস করেছি। শিশু স্বয়মসেবক থেকে বালক, তারপর তরুণ, তারপর শিক্ষক, মুখ্যশিক্ষক। তারপর জনসঙ্ঘ দলের হয়ে দিল্লি — জনতা পার্টি তৈরী হওয়ার প্রথম জাতীয় সম্মেলনে। আমাকে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদক করা হয়েছিল। আমার অনেক বন্ধু সেসব দিনের কথা জানে। তাদের অনেকে এখন ফেসবুকেও আছে।

অদ্ভুত কথা হলো, তারা তখন আমার জনসঙ্ঘ, আর এস এস, এবিভিপি করা দেখে হাসতো। এখন তারা অনেকে হিন্দুত্ববাদীদের গোঁড়া সমর্থক। আর আমি চিরকালের মতো গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।

কেন বেরিয়ে এলাম? সে অনেক কথা। আদর্শগত কারণেই বেরিয়ে এসেছি। আমি ঘৃণা, হিংসা, যুদ্ধবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। আমি আমার দুটো বই — ইংরিজি বই In the Belly of the Beast এবং বাংলা স্মৃতিকথা ঘটিকাহিনি’তে বিশদভাবে লিখেছি। পারলে পড়ে নেবেন।

ইংরিজি বইটা আউট অফ প্রিন্ট, কিন্তু কিছু কিছু অংশ পাওয়া যায় অনলাইনে। ঘটিকাহিনি সবে দুবছর আগে বেরিয়েছে। দেজ পাবলিশিং, ধ্যানবিন্দু, এবং প্রকাশক রাবণ প্রকাশনাতে পেয়ে যাবেন।

পড়ুন। প্রশ্ন করুন। চ্যালেঞ্জ করুন আমাকে।

(পর্ব ২ লিখবো। আশা করি আপনাদের জানার উৎসাহ থাকবে।)